কক্সবাজারের উখিয়ায় ৬০টি সাদা বুক পাখি উদ্ধার।
শীত মৌসুম আসতে না আসতেই শুরু হয়েছে পরিযায়ী ও স্থানীয় পাখি শিকার। এরই মধ্যে কক্সবাজারের উখিয়ায় বন বিভাগের অভিযানে বিপুল সংখ্যক সাদা বুকের পাখি বক উদ্ধার করা হয়েছে। শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে উখিয়া বন রেঞ্জের অধীনে সদর বনবিটের মাছকারিয়া ডেবা এলাকায় বিশেষ অভিযানে ৬০টি বক উদ্ধার করে বন বিভাগ। উদ্ধারের পর বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে বিকেলে বকগুলোকে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়।
উখিয়া বন রেঞ্জ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আব্দুল মন্নান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৬০টি বক উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। উদ্ধারকৃত বকগুলো বিকেলে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি আরও জানান, এ ধরনের অভিযান নিয়মিত চলবে এবং প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শ্রমিক নেতা রফিকুল ইসলাম হান্নান জানান, প্রতি বছর শীত আসার সাথে সাথে আমাদের এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। কিন্তু কিছু অসাধু মানুষ জাল পেতে বা বন্দুক দিয়ে নির্বিচারে এদের শিকার করে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বন বিভাগের অভিযান আমরা স্বাগত জানাই, তবে শুধু উদ্ধার করলেই হবে না, অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
আরেক বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, আমাদের গ্রামের ছোট ছোট খালে ও বিলগুলোতে আগে শীতকালে হাজার হাজার পাখির দেখা মিলতো। এখন সেই দৃশ্য আর দেখা যায় না। কারণ শিকারিরা দল বেঁধে পাখি ধরে নিয়ে যায়। যদি এভাবে চলতে থাকে তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আর এসব পাখির নামই শুধু শুনবে।
পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে কাজ করা স্থানীয় পরিবেশকর্মী হেলাল উদ্দিন বলেন, অতীতে কক্সবাজার অঞ্চলে শীতকালে বিভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির মেলা বসতো। কিন্তু এখন অবাধ শিকার ও প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের কারণে সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এই বকগুলো শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্যই নয়, আমাদের পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এরা কৃষিজমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে।
তিনি আরও বলেন, অতিদ্রুত স্থানীয় প্রশাসন, বন বিভাগ ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে পাখি শিকার বন্ধে সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। পাশাপাশি আইন প্রয়োগ ও কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
উখিয়ায় বন বিভাগের এ অভিযানকে স্বাগত জানালেও সচেতন মহল মনে করে, কেবল অভিযান নয়, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সচেতনতা বৃদ্ধি, আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে হয়তো ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আবারও উখিয়ার আকাশে হাজারো সাদা বুক পাখির উড়াউড়ির দৃশ্য দেখতে পাবে।