সীমান্তের পাথররাজ্যে ধ্বংসের ছাপ, সাদা পাথরে নিঃশেষের শঙ্খা
সিলেটের সীমান্তবর্তী ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর একসময় পাহাড়ি নদীর বুকে ঝলমলে সৌন্দর্যের প্রতীক ছিল, যা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ছিল অন্যতম প্রিয় গন্তব্য। কিন্তু এখন সেখানে দাঁড়ালে চোখে পড়ে ধূসর বালুচর, খোঁড়াখুঁড়িতে সৃষ্ট গর্ত আর ফাঁকা নদীতল। ২০২৪ সালের আগস্টের পর থেকে লাগাতার অবৈধ পাথর উত্তোলনে ধ্বংস হয়ে গেছে প্রাকৃতিক এই সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান। বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশকর্মীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধলাই নদীর উৎসমুখ থেকে শত শত নৌকায় প্রকাশ্য দিবালোকে পাথর তোলা হচ্ছে। বড় পাথরের মতোই ছোট-বড় সব ধরণের পাথরের স্তূপও উধাও। নদীর তলদেশে জেগে উঠেছে বালুচর, তৈরি হয়েছে গভীর গর্ত। স্থানীয়দের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র সাদা পাথর একসময় পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে, কমে যাবে সরকারি রাজস্ব আয়ের পরিমাণও।
পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীদের দাবি, গত এক বছরে এখান থেকে প্রায় দেড় কোটি ঘনফুট পাথর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যার বাজারমূল্য দুই শত কোটি টাকার বেশি। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দুর্বল নজরদারির কারণে অবৈধ উত্তোলন রোধ করা সম্ভব হয়নি। মাঝেমধ্যে অভিযান হলেও তা স্থায়ী কোনো প্রভাব ফেলেনি।
পরিবেশ রক্ষা আন্দোলনের প্রতিনিধিদের মতে, সিলেট অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণে দীর্ঘদিন ধরে কাঠামোগত পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপের অভাব রয়েছে। তারা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান—অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা ও আইন প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য।
কোম্পানীগঞ্জ থানার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাদা পাথরকেন্দ্রিক ঘটনায় ইতোমধ্যে একাধিক মামলা হয়েছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে স্থায়ী সমাধানের জন্য বড় ধরনের সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কার্যালয় জানিয়েছে, সাদা পাথর এলাকা ইকোলজিক্যালি সংরক্ষিত নয় বলে তাদের এককভাবে অভিযান পরিচালনার এখতিয়ার নেই; তবে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে অভিযান হলে তারা সহযোগিতা করে।
স্থানীয় সচেতন মহলের মতে, রাজনৈতিক বা সামাজিক পরিচয় নির্বিশেষে অবৈধ উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একইসঙ্গে পর্যটন ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি নীতি গ্রহণ জরুরি।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সাদা পাথরের অবৈধ উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে এবং তা অব্যাহত থাকবে।