আর কত লাশ গুনবে সাংবাদিক সমাজ নিরাপত্তা আইন কি মরার পরেই আসবে!
সাংবাদিক তুহিনের নির্মম হত্যাকাণ্ড দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজের হৃদয়ে এক গভীর ঘা হয়ে আছে, ঘটনার বর্ণনা থেকে স্পষ্ট, তুহিন একটি নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া বিবাদের ভিডিও ধারণ করছিলেন, সন্ত্রাসীরা ভিডিও মুছে ফেলতে চাপ দিলে তিনি অস্বীকার করেন, আর সেই অস্বীকারের মূল্য তুহিনকে দিতে হলো জীবন দিয়ে, ধারালো অস্ত্রের কোপে তুহিনের দৌড়াতে থাকা জীবনের শেষ ফুঁটে যায় রাস্তার সামনে, এক নিষ্ঠুর নির্মমতায়।
পুলিশ ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হয়ে সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করলেও, এ ধরনের হত্যাকাণ্ড যেন এখন নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে, কলমধারীদের উপর হামলা, হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজের ঘটনা যেন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে আমাদের দেশে, তবে সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো—বছর ঘুরে বছর, বিচারহীনতার অন্ধকারে এই হত্যাকাণ্ডগুলো হারিয়ে যায়। আদালতের ঝুলন্ত মামলার কারণেই অপরাধীরা হয়ে ওঠে আরও বেপরোয়া।
বিশ্বস্ত আন্তর্জাতিক সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (CPJ) জানায়, বাংলাদেশে সাংবাদিক হত্যা ও হামলার বেশিরভাগ মামলাই বিচারহীন থেকে যায়, দেশের সাংবাদিক সমাজ বারবার দাবি করেছে, যেন তাদের জন্য একটি পৃথক সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়, যেখানে সাংবাদিকতার স্বাধীনতা ও সুরক্ষার জন্য বিশেষ কাঠামো, দ্রুত তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা থাকবে।
কিন্তু বাস্তবতা হলো, সংসদে এই আইন প্রণয়নের বিষয়টি কেবল আলোচনার টেবিলেই পড়ে আছে, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, পেশাজীবী সংগঠনগুলোর মধ্যে বিভাজন, আর গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা—এসব কারণে বিলম্ব হচ্ছে এই আইনের।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া বর্ষসেরা সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ড এখনো বিচারহীন, ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার হয়নি, এটাই প্রমাণ করে শুধুমাত্র শোক ও নিন্দা প্রকাশ করে সমস্যার সমাধান আসবে না, দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
আজ প্রশ্ন হলো আর কত লাশ গুনবে সাংবাদিক সমাজ? আর কত মায়ের বুক কাঁপবে, বাবার চোখে অশ্রু ঝরে? আর কত সহকর্মী কালো ব্যাজ পরে শোক জানাবে? প্রতিবার প্রশাসন আশ্বাস দেয়, ‘দোষীদের শাস্তি দেওয়া হবে।’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইলগুলো ধূলিসাৎ হয়, অপরাধীরা ফিরে যায় আগের আস্তানায়।
এখন সময় শুধু শোক প্রকাশের নয়; এখন সময় নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের, দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার, এবং সাংবাদিকদের সুরক্ষা প্রদানের, রাষ্ট্র যদি এই দায়িত্বে ব্যর্থ হয়, তাহলে শুধু গণমাধ্যম নয়, পুরো গণতন্ত্রেরও পরাজয় নিশ্চিত, সাংবাদিকদের রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে দ্রুত সাংবাদিক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সচেতন মহল ও সাংবাদিক সমাজ সহ ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।