নিঃশব্দ এক সকাল। শিমুলতলা গ্রামের বাতাস যেন হঠাৎ থেমে গিয়েছিল। ছোট্ট ছেলেটির জীবনে নেমে আসে ভয়ংকর এক ঝড়—তার মা, তার পৃথিবী, হঠাৎ করেই চিরতরে চলে যান। পরিবারের সবাই মিলে বাড়ির পাশের ছোট্ট বাগানে মাটিচাপা দেয় তাকে। চারপাশে কান্নার রোল, চোখে অশ্রু—কিন্তু ছোট্ট ছেলেটির চোখে শুধুই স্তব্ধতা। সে দাঁড়িয়ে ছিল পাশে… দেখেছিল, কেমন করে তার মাকে মাটির নিচে শোয়ানো হলো। সেই দৃশ্য তার হৃদয়ে কেটে বসে যায় চিরদিনের জন্য।
সেদিন থেকেই সব বদলে যায়।
প্রতিদিন, সূর্য ওঠার আগে কিংবা ডোবার পরে, ছেলেটি ছুটে যায় সেই কবরের পাশে। কখনো চুপ করে বসে থাকে, যেন কিছু শোনার চেষ্টা করছে। কখনো ধীরে ধীরে ডাকে—”মা… মা, তুমি কোথায় গেলে?” তার কণ্ঠে থাকে না কোনো অভিমান, শুধু একটা অসহ্য অপেক্ষা। সে জানে না ‘মৃত্যু’ মানে কী। শুধু ভাবে, মা হয়তো ঘুমিয়ে আছেন। হয়তো একটু পরেই উঠে বসে বলবেন—”খোকা, খেলতে যা।”
কিন্তু মা আর ওঠেন না। সেই নিশ্চুপ মাটি শুধু তাকিয়ে থাকে তার দিকে।
যেখানে তার বয়সী অন্য শিশুরা দৌড়ায়, হাসে, খেলে—সেখানে সে বসে থাকে নিশ্চুপ। কবরের পাশেই তার দিন কাটে। ওই মাটির নিচেই যে তার সবচেয়ে আপনজন, তার ভালোবাসা, তার পৃথিবী—তার মা।
গ্রামের লোকেরা দূর থেকে দেখে ছেলেটিকে। কারো মুখে কোনো কথা আসে না। কেউ এগিয়ে যেতে পারে না। শুধু চোখের কোণ ভিজে ওঠে আর বুকের ভেতরটা কেমন যেন টনটন করে ওঠে।
মা তো হারিয়েই গেছে। কিন্তু ছেলেটির সেই অপেক্ষা, সেই মায়ের ডাক—আজও শিমুলতলা গ্রামের বাতাসে ভেসে বেড়ায়, এক চিরন্তন হাহাকারের মতো।