নড়াইলের কালিয়ায় অপচিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা
নড়াইলের কালিয়ায় বেসরকারি একটি ক্লিনিকের অপচিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি তদন্তে এসে খাদিজা সেবা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ শোয়াইবের নেতৃত্বে গঠিত তদন্তদল ক্লিনিকের নানা অনিয়ম চিহ্নিত করে। তদন্তে উঠে আসে—ডিউটির সময় কোনো ডাক্তার বা প্রশিক্ষিত নার্স ছিলেন না, অপারেশন থিয়েটার মানসম্মত নয় এবং প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা অনুপস্থিত। এসব অনিয়মের প্রেক্ষিতে ক্লিনিকটির অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করা হয়।
দলে আরও উপস্থিত ছিলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পার্থ প্রতিম বিশ্বাস, মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ হাসিবুর রহমান, ডেন্টাল সার্জন ডা. মোঃ সারোয়ার হোসেন ও উপজেলা স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মইনুদ্দিন।
এর আগে বুধবার সকালে উপজেলার কলাবাড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা কামাল শেখের স্ত্রী লাবনী আক্তার (১৯) প্রসবের জন্য ওই ক্লিনিকে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে জমজ সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু অপারেশনের পর লাবনী আক্তার গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাঁকে দ্রুত খুলনায় রেফার করে। তবে খুলনার ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেন চিকিৎসকরা।
নিহতের দেবর মোঃ আসলাম অভিযোগ করে বলেন—“কোনো এনেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ ছাড়াই অপারেশন করা হয়েছিল। এ কারণেই আমার ভাবীর মৃত্যু হয়েছে।” বর্তমানে নবজাতক দুই শিশু অসুস্থ অবস্থায় খুলনা শিশু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আইনগত পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি জানান, পরিবারের সদস্যরা নবজাতকের চিকিৎসার জন্য খুলনায় অবস্থান করছেন। বাড়ি ফিরে এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
সাংবাদিকরা ক্লিনিকের পরিচালক খাদিজা পারভীনের বক্তব্য নিতে গেলে তিনি অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন এবং মামলা-মোকদ্দমার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. আঃ রশিদ জানান—“উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও একটি টিম তদন্ত করেছেন। প্রাথমিকভাবে অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
উল্লেখ্য, খাদিজা সেবা ক্লিনিকের মালিক খাদিজা বেগম পূর্বেও অপচিকিৎসা, নিম্নমানের সেবা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের জন্য একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা ও সাজা পেয়েছিলেন। এমনকি কয়েকজন রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ থাকলেও ক্লিনিকটি এখনো চালু রয়েছে।