শিক্ষা নগরী হিসেবে পরিচিত ময়মনসিংহ নগরী। এই শিক্ষা নগরীর অন্যতম স্বনামধন্য ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো আনন্দ মোহন কলেজ। শিক্ষা বিস্তারে অনন্য এই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে সততা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন দল মত নির্বিশেষে সকলের প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর মো: আমান উল্লাহ্।
তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে শুরু করে সহশিক্ষা কার্যক্রমগুলো এবং খেলাধূলা ক্ষেত্রে ঈর্ষান্বিত সাফল্য অর্জন করছেন এই প্রতিষ্ঠান।
জানা যায়, আনন্দ মোহন কলেজ বাংলাদেশের মধ্যে ময়মনসিংহ
শহরে অবস্থিত একটি সরকারি মহাবিদ্যালয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ সালে আনন্দ মোহন বসু দ্বারা ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এটি ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে।
২০২৪ সালের তথ্যানুসারে এখানে মোট ২৪,৯৮৭ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। আনন্দ মোহন বসু প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন নাম ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন পরে সিটি কলেজিয়েট স্কুল এবং ময়মনসিংহ সিটি কলেজ।
জ্ঞানের জন্য এসো, সেবার জন্য বেরিয়ে যাও এই নীতিবাক্য মেনে ১৪৪ বছর আগে ময়মনসিংহ ইনস্টিটিউশন হিসেবে এবং ১১৬ বছর আগে মহাবিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে এখনও শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। ২০১০ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ১২,৭০১ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ১১,৬৯৬ জন এবং ফেল করেছে ১,০০৫ জন। ৪,২৫১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ (এ+) অর্জন করেছে।
এই সময়ে গড় পাসের হার ছিল ৯২.০৯%, এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার ছিল ৩৩.৪৭%। ২০২৪ সহপাঠী কলেজ র্যাংকিং অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি জাতীয় পর্যায়ে ৬৬তম, ময়মনসিংহ বিভাগ ও জেলায় ৩য় স্থানে অবস্থান করেছে। ২০১৭ ও ২০১৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ র্যাংকিংয়ে প্রতিষ্ঠানটি দেশের সেরা পাঁচটি কলেজের মধ্যে স্থান লাভ করে।
আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের পরীক্ষায় এই কলেজের শিক্ষার্থীদের স্থান পাওয়ায় হার কম নয়। তাই ২০২৩ সালেও উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তির জন্য সারা দেশের মধ্যে দেশের মধ্যে সবচেয়ে ৪৬ হাজার শিক্ষার্থী আবেদন জমা দিয়েছেন, একক কলেজ হিসেবে যা সর্বোচ্চ। এছাড়া এবার এ কলেজের ৫ জন অধ্যাপক বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছেন।
এছাড়াও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দেশের প্রথম শ্রেনীর অফিসার হিসেবে সকল স্তরে কর্মরত রয়েছে। কলেজের একাডেমিক ভবনগুলোতে বিভিন্ন বিভাগের পাশাপাশি দেখা যাতে বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস সহ বিভিন্ন সংগঠনের কার্যালয়।
সম্প্রতি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত আন্তকলেজ বিতর্ক প্রতিযোগিতা ২০২৩ এ জাতীয় পর্যায়ে রানারআপ হয় আনন্দ মোহন কলেজের বিতার্কিক দল। টেলিভিশন বিতর্কেও এটিএন বাংলায় পরপর তিনবার চ্যাস্পিয়ান হয়েছে। কলেজটির সাফল্য ছিল নজরকাড়া, ক্লাবের মধ্যে সাংস্কৃতিক পরিষদ, পরিবেশ ক্লাব, নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও কলেজে বেশী। কলেজ ক্যাম্পাসটি ময়মনসিংহ শহরের কাচিঝুলি কলেজ রোড এলাকায় অবস্থিত।
মোট ১৬.৮০ একর জায়গা নিয়ে গঠিত, যেখানে রয়েছে দ্বিতল একাডেমিক ভবন, আধুনিক, অডিটোরিয়াম,শহীদ মিনার, পৃথক ছাত্র-ছাত্রী মিলনায়তন, এবং প্রশাসনিক ভবন। ক্যাম্পাসের মধ্যে রয়েছে প্রশান্ত খেলার মাঠ, পুকুর, বোটানিক্যাল গার্ডেন, এবং আধুনিক গবেষণাগার ছাত্রছাত্রীদের জন্য কলেজে ৩টি ছাত্র ও ৪ টি ছাত্রী হোস্টেল রয়েছে।
এছাড়াও শিক্ষকদের আবাসিক ভবন, অতিথি ভবন, ব্যাংক বুথ, পোস্ট অফিস, মসজিদ, এবং বিদ্যুৎ সাবস্টেশনের সুবিধা রয়েছে। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য কল্যাণ তহবিল, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। কলেজ প্রাঙ্গণের ভেতরে একটি পুকুরও রয়েছে। বতর্মানে ১০ জেলা একাডেমিক ভবন এর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
কলেজের পেছন দিকে হোস্টেল করার প্রস্তাবনা রয়েছে। অধ্যক্ষের পরিত্যাক্ত বাস ভবনটি সংস্কার করার পরিকল্পনার কথাও রয়েছে। কলেজের পুকুরে গাইড ওয়াল ওয়াকিং পথ তৈরিসহ সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্য ৪ কোটি ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ হয়েছে সিমানা প্রাচিরের জন্য ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মানের জন্য ৮০৫ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ হয়েছে যা অতি শীগ্রই কাজ শুরুর হবে জানা গেছে।
এ ছাড়াও জানা যায়, বিভাগীয় শহর নদীর ওপারে ১০ একর জায়গা বরাদ্ধ করা হয়েছে। অধ্যক্ষ মোঃ আমান উল্লাহ সর্ম্পকে, অত্র কলেজের একাধীক ছাত্রছাত্রীরা জানান আমাদের দেখা একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক, যিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে একজন মহান মানুষ। এমন কোন ছাত্র-ছাত্রী নাই যে স্যারের কাছে কোন প্রয়োজনে গেছেন, আর ব্যার্থ হয়ে ফিরে এসেছেন।
আমার জানা মতে আনন্দ মোহন কলেজ স্যারের হাত ধরে অনেক দূর এগিয়ে গেছে, আরও বহুদূরে এগিয়ে যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আনন্দ মোহন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোঃ আমান উল্লাহ্ বলেন, ময়মনসিংহ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী বুয়েটে, মেডিকেল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। শুধু তাই নয় বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও আনন্দ মোহন কলেজের শিক্ষার্থীরা চান্স পাচ্ছে।
বিশ্বের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় আমেরিকায় (এমআইটি) পৃথিবীর সব থেকে মর্যাদাপূর্ণ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের সহকর্মী ডঃ আনোয়ারুল হকের ছেলে আবিদ আনোয়ার এখান থেকে কিছুদিন আগে চান্স পেয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবছর বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রথম শ্রেনীর অফিসার হিসেবে দেশের সকল ক্ষেত্রে কর্মরত রয়েছে।
অধ্যক্ষ প্রফেসর আমান উল্লাহ আরও জানান, তিনি যতদিন আছেন ছাত্রছাত্রীদের যা ভাল ও মঙ্গল হয় তাই করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে, প্রতিটি বিষয়ে তিনি আলাদা গুরুত্ব দিয়ে একাডেমিক ও সহশিক্ষা কার্যক্রমকে যুগপৎভাবে এগিয়ে নিয়ে আমরা আমাদের কলেজকে দেশ সেরা কলেজ হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি।