ঢাকার সাভারে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শহীদ পরিবারের দায়ের করা একাধিক হত্যা মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সাভার থানা যুবলীগ নেতা হেলাল ওরফে মুরগি হেলালকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৬ জুলাই) ভোররাতে সাভারের মজিদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত হেলাল (৩০) সাভার পৌর এলাকার মজিদপুর মহল্লার হারুন আর রশিদের ছেলে। তিনি সাভার উপজেলার পতিত চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও সাভার থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির আহমেদের অনুসারী।
এই হেলাল ফ্যাসিষ্ট সরকারের আমলে সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পতিত উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুরুল আলম রাজীবের প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়, পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, মার্কেট থেকে চাঁদা আদায়, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে চাঁদা আদায় ও
মুরগির গাড়ি থেকে চাঁদাবাজির কোটি টাকার ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল।
সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহবুব উল্লাহ সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে কিছুদিন পলাতক থাকলেও গ্রেপ্তার এড়াতে রাতারাতি ছদ্মবেশ ধারণ করে বিএনপির এক নেতাকে ম্যানেজ করে পুনরায় এলাকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের নিয়ন্ত্রণ রাখছিলেন যুবলীগ নেতা হেলাল। এ নিয়ে খবরের শিরোনাম হলে সাভার জুড়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে তাকে ধরতে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় পুলিশ।
বুধবার ভোররাতে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এসআই মাহবুব উল্লাহ সরকারের নেতৃত্বে সাভার মডেল থানা পুলিশের অভিযানে পৌরসভার মজিদপুর এলাকা থেকে সন্ত্রাসী হেলাল ওরফে মুরগি হেলালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে তার অন্যতম সহযোগী শীর্ষ সন্ত্রাসী ল্যাংড়া সোহেল, মুরগি নজরুলসহ আরো পলাতক দুইজনকে ধরতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
পুলিশ জানায়, হেলালের বিরুদ্ধে পতিত সরকারের আমলে ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়ে পুলিশের ওপর হামলাসহ হত্যা, চাঁদাবাজি, ফ্ল্যাট দখল, মারধরের পর হত্যাচেষ্টাসহ প্রতারণার অন্তত ৬ টি মামলা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সন্ত্রাসীদের গডফাদার মঞ্জুরুল আলম রাজীবের প্রভাব বিস্তার করে সন্ত্রাসী চক্রের প্রধান হেলালের পালিত লোকজন সাভার থানা এলাকার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাতে অস্থায়ী দোকান বসিয়ে চাঁদা আদায়, সাভার বিরুলিয়া রোড ও পৌর এলাকার শাখা সড়কে চলাচলরত পরিবহন থেকে চাঁদা আদায়, মার্কেট থেকে চাঁদা আদায়, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি থেকে চাঁদা আদায় ও মুরগির গাড়ি থেকে চাঁদাবাজি করে আসছিল। এর আগে এমন অপকর্ম করে পুলিশের হাতে একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে হাজতবাস করেন হেলাল। জুলাই এবং ৩ ও ৪ আগষ্ট সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে মিছিল কারীদের প্রকাশ্যে পিটিয়ে গুলি বর্ষণ করেছে এই যুবলীগ নেতা ও তার সহযোগীরা। গত ৫ আগষ্টের পর নিজেকে বিএনপি’র সমর্থক দাবি করে প্রচার করতে শুরু করেন এই প্রতারক। তবে বিএনপির শীর্ষ স্থানীয় নেতারা সন্ত্রাসী হেলালকে পরজীবী হাইব্রিড আখ্যায়িত করে তার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান। এদিকে মুরগি হেলালের গ্রেপ্তারের খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন সাভারের স্থানীয় জনগণ ও ভুক্তভোগীরা।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, ‘হেলালের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে নিহতের স্বজনদের দায়েরকৃত ২ টি হত্যাসহ ৬ টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় যুবলীগ নেতা হেলালের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা জুলাই মাসসহ গত ৪ ও ৫ আগস্ট সাভারে জমায়েত হতে থাকেন। এ সময় স্বৈরাচার শেখ হাসিনার অন্যতম সহযোগী সাভার উপজেলার পতিত চেয়ারম্যান মঞ্জুরুল আলম রাজীব এবং ঢাকা-১৯ আসনের সাবেক এমপি সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ ঘটনায় সাভার-আশুলিয়ায় শতাধিক ছাত্র-জনতা শহিদ হন।